রাখাইনে আরাকান আর্মির প্রভাব, মানবিক করিডর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট

May 20, 2025

বুলবুল সিদ্দিকী

সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমারের জান্তা শাষকগোষ্ঠীর মধ্যেকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আমরা দেখতে পাই যে রাখাইনের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা এখন তাদের দখলে। ২০০৯ সালে গঠিত আরাকান আর্মির রাখাইনে এখন  প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে। তাই রাখাইনে আরাকান আর্মির ভবিষ্যৎ কি হবে এবং  দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এই যুদ্ধাবস্থার নানাবিধ প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাধ্যমে ২০২১ সালে জান্তা সরকারের আবির্ভাব এবং এর পরে জান্তা সরকারের সাথে আরাকান আর্মির যুদ্ধের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় যে নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশ কে সয়ে যেতে হচ্ছে, সেটি হলো রোহিঙ্গা সংকটের অচলাবস্থা। ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমারের সাথে নানা রকম দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও আদতে রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের কোন বদল ঘটেনি। সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা ও আরাকান আর্মির রাখাইনের সিংহভাগ দখলের কারণে তাদের প্রত্যাবাসনের কোন অগ্রগতিতো নেই-ই বরং রোহিঙ্গা সংকট আরো নানা জটিলতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে যদিও মায়ানমারের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ, প্রাথমিকভাবে এক লক্ষ আশি হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন যাদেরকে মায়ানমার নিজ দেশের বাসিন্দা বলে তারা যাচাই করে নিশ্চিত হতে পেরেছেন, কিন্তু আরাকানে বিদ্যমান যুদ্ধাবস্থায় মিয়ানমারের এই বক্তব্য কতটা বাস্তবায়নযোগ্য সেটি একটি বিরাট প্রশ্ন কেননা রাখাইনে তাদের তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সময়ে নেই। উপরন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের উপর জুলম ও দমন-পীড়নের কারণে প্রায় এক লক্ষাধিকেরও অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এর সাথে রয়েছে আরাকান আর্মির সাথে রোহিঙ্গাদের ‍সুসম্পর্কের ঘাটতি, যা তাদের ভবিষ্যতের সম্পর্ককে নির্ধারণ  করতে বড় ভূমিকা পালন করবে।

এমতাবস্থায় রাখাইনে মানবিক করিডর  বা মানবিক সাহায্যার্থে প্যাসেজ এর আলোচনা সাম্প্রতিক সময়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। এই আলোচনার সূত্রপাত হয় রাখাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিপূর্ণ জীবন যাপনের প্রেক্ষিতে। তাই মানবিক সহায়তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে এবং এর সাথে চলছে মানবিক করিডরের আলোচনাও। এর সূত্রপাত হয় সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে হিউমিনিটেরিয়ান প্যাসেজ বা মানবিক করিডর  গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপেদষ্টার মন্তব্যের মাধ্যেমে, যেখানে তিনি বলেন যে বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও এর পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারো সাথে তাদের এখনো কোন আলোচনা হয়নি। এমন নানামুখী আলোচনার প্রেক্ষিতে গবেষক, রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন, আশঙ্কা এবং দ্বিধা তৈরি হয়েছে। যার ফলে মানবিক করিডরের আলোচনাটি জনমনে সমালোচনার জন্ম দেয়। এরই প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বিষয়টি মানবিক করিডর নয় বরং হিউমানিটেরিয়ান প্যাসেজ হতে পারে যার মাধ্যমে মিয়ানমারে নানা রকম সহায়তা পৌঁছানো সহজ হবে। যেখানে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে মানবিক করিডর ও হিউমানিটেরিয়ান প্যাসেজ এর ধারণা ভিন্ন। তবে যে নামই ব্যবহার করা হোক না কেন, রাখাইনে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রধান যুক্তি হলো এতে করে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে ত্রাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনের সামগ্রী প্রেরণ করা সম্ভব হবে।

মানবিক করিডর এবং রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আলোচনার আগে একটু দেখে নেয়া যাক মানবিক করিডর  বলতে আসলে কি বোঝায়। জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সশস্ত্র সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সংঘাত বা যুদ্ধ-পরিস্থিতির সাময়িক বিরতির জন্য অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয় তার মধ্যে একটি হল মানবিক করিডর। এর মাধ্যমে সশস্ত্র সংঘাতের সাময়িক বিরতির মাধ্যমে একটি নিরাপদ করিডর বা নিরাপদ প্যাসেজ গড়ে তোলা হয় যার মাধ্যমে নানারকম সহায়তা প্রদান করা ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। মানবিক করিডরকে হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজের সমার্থক হিসেবেও দেখা হয়। তাই যদি আমরা মানবিক করিডর না বলে হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজের কথা বলি আদতে এই দুই এর মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তাই যে নামেই ডাকি না কেন, এই মানবিক করিডরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয় যেখানে সশস্ত্র সংঘাত যেন না ঘটে। সে বিষয়ে দুই পক্ষ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একমত হয়। মানবিক করিডরের পরবর্তী ধাপে সেই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের অধিবাসীদের একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া অথবা সেখানে খাদ্য, ঔষধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা হয়।

এই ধরনের মানবিক করিডরের উদাহরণ আমরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই। এখানে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হবে সেটাই প্রত্যাশা করা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই যে জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান, রেড ক্রস এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ইহুদি শিশুদেরকে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর, ৯০ এর দশকে সারায়েভো সংকট, ২০১৮ তে সিরিয়ার জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা, এবং সর্বশেষ দেখতে পাই ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে। আর বর্তমানে রাখাইনের জন্য এই মানবিক করিডরের আলোচনা চলছে।

অতীতের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই যে, মানবিক করিডরের অন্যতম প্রধান ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জাতিগোষ্ঠীকে সংঘাত পূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা। যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে চলমান ইনফ্লাক্সকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সেখানে মানবিক করিডরের মাধ্যমে আরো বৃহৎ অংশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ায় শুরু অস্বাভাবিক নয়। এ প্রেক্ষাপটে যদি আরো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হয় তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত সেটা ভেবে দেখা জরুরি।  কেননা এখনই এক মিলিয়নের উপরে রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সাথে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা। তাই বাংলাদেশের জন্য এখন অগ্রাধিকার হবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও নতুন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যা করতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু মানবিক করিডরের আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের কোন দিক নির্দেশনা আমরা দেখতে পাই না বা এর কোন দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। মানবিক করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে, সেই বিষয়েও যথাযথ পরিষ্কার ধারণা আমাদের থাকতে হবে এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের স্বচ্ছ থাকতে হবে। অথচ আমরা সেটা করছি না বরং মানবিক করিডরের আলোচনা রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে নতুন সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নানা রকম বক্তব্য জনসাধারণের মাঝে আরো বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বিগত কয়েক মাসে রোহিঙ্গা সংকট এবং মানবিক করিডর ঘিরে ক্রমাগত নানাবিধ আলোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে তা দৃশ্যমান।

আরাকানের সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা আমাদের আরেকটি চিন্তার জায়গা তৈরি করছে সেটি হলো, সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি। কেননা সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখলে বোঝা যায় যে সীমান্ত প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা খুব যে সুখকর সেটি বলা যাবে না। আরাকান আর্মির সদস্যদের আমাদের ভূখণ্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং সীমান্ত এলাকায় বিশেষ করে নাফ নদীতে বাংলাদেশের জেলেদের উপর ছোঁড়া গুলি তাদের আহত করেছে। শুধু তাই নয়, বিগত ৫-৬ মাসে প্রায় ১৫০ বাংলাদেশি জেলেদেরকে আরাকান আর্মি অপহরণ করে, যা আমাদের জন্য এক উদ্বেগের বিষয়। অনেককেই উদ্ধার করা গেলেও অনেকের তথ্যই পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়ছে। এর সাথে যে সকল জেলেরা মাছ ধরার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তারা নিরাপত্তা ঝুঁকির সাথে জীবিকার ঝুঁকিতেও রয়েছে। এতে করে আরাকান আর্মির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন একটি বড় সমস্যা তৈরি করবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার জন্য কোন ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয় না। ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’।

আরাকান প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরো একটি জটিলতা হলো আরাকান আর্মি একটি ‘নন-স্টেইট এক্টর’। ফলে তাদের সাথে যোগাযোগের যথাযথ চ্যানেল বা মাধ্যম এখনো গড়ে উঠেনি। এ কারণে বাংলাদেশকে নিজ স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আরাকান ইস্যুতে আরো বেশি উদ্ভাবনী ও বাস্তবমুখি কুটনৈতিক ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে বলে অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই সমস্যাটি এই অঞ্চলের বাকি দেশগুলো তথা ভারত ও মিয়ানমারের জন্যও প্রযোজ্য। আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও আরাকান আর্মির উত্থান একটি বড় আলোচনার বিষয়। এ কারণে সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি এই অঞ্চলে যেন অস্ত্র-পাচারের বিষয়গুলো না ঘটে সে বিষয়েও কঠিন পদক্ষেপ নেবার জন্য অনেক বিশষজ্ঞগণ মতামত দিচ্ছেন। কেননা এই অঞ্চলটি আগে থেকেই মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, সহিংসতা এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকির জন্য একটি অন্যতম হটস্পট যা নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশ নানাভাবে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয় কিনা তা দেশের স্বার্থে আরো সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বিষয়েও বাংলাদেশ সরকারের একটি স্পষ্ট নীতিমালাও আমাদের রাখতে হবে, তা না হলে, ক্রমাগত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের অধিবাসীদের পরিচিতি ও ভারসাম্য একটি ঝুঁকির মুখে পড়বে যা ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

মানবিক করিডর বা ‘হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ’ যে নামেই ডাকি না কেন, তা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেবার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরো বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রচেষ্টা হাতে নিতে হবে। কেননা এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্যান্য স্টেইকহোল্ডার বা অংশীজনদের সাথে পরামর্শ করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশের উপর সুদুর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে যার পরবর্তী পরিণতি এবং ব্যবস্থাপনার দায়-দায়িত্ব ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকেই গ্রহণ ও বহন করতে হবে। যদিও জাতিসংঘের মানবিক করিডরের প্রস্তাবনা বেশ পুরোনো কিন্তু হঠাৎ করে তড়িঘড়ি করে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই জাতীয় স্বার্থ জড়িত এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করা সমীচীন হবে। শরণার্থী বিষয়ে একটি টেকসই রূপরেখা এবং পরিকল্পনা নীতি না থাকার কারণে সরকারকে নানা সময় এডহক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাজনক হয়। যে কারণে একজন গবেষক হিসেবে আমি রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি জাতীয় রোডম্যাপ বা রূপরেখা এবং শরণার্থী বিষয়ক নীতি প্রণয়ন করার পক্ষে কথা বলে আসছি। আমাদের সেই ধরনের কোন দৃশ্যমান পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি বিগত সময় গুলোতে ছিলনা। বিশেষ করে যদি প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয় এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডর আমাদের প্রত্যাশা মত কাজ না করে তাহলে বিকল্প কি হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি আমাদের থাকা উচিত। সেটি না হলে রোহিঙ্গা সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করবে এবং তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন একটি “মিথ” হিসেবে থেকে যাবে যা আমাদের ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উভয়ের জন্যই হতাশার একটি বিষয় হবে। তাই আরাকানের এই সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থার প্রভাব আমাদের উপর কেমন হতে পারে তার ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তা না হলে সীমান্তবর্তী এই এলাকার স্থিতাবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।