ফেলানী হত্যার ১৪ বছর পূর্ণ হলো আজ। কাঁটাতারের সীমান্তে ঝুলে থাকা ফেলানী খাতুনের লাশ আসলে নিছক একটি খুনের চিত্র নয় বরং ভারতের আধিপত্যবাদী, সম্প্রসারণবাদী, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সামনে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বাস্তব চিত্র। মানবাধিকার সংস্থা “অধিকার” এর তথ্য অনুসারে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারত নিরাপত্তা বাহিনী বিএসএফ কতৃক বাংলাদেশের নাগরিক খুন হয়েছে ৫৮৮ জন এবং আহত হয়েছে ৭৭৩ জন। ১৪ বছর হয়ে গেল ইতোমধ্যে, ফেলানী হত্যা মামলা আজও ঝুলে আছে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে। এই মামলার প্রতি ভারতীয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং এর বিচারিক প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণ করলে এটি ধরে নেওয়া খুবই স্বাভাবিক যে, ফেলানী হত্যার বিচার হবে না। ফেলানীর মামলার ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যায় বিচারহীনতার আলামত কোন বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতির চলমান ধারাবাহিকতা। প্রতিনিয়ত নির্বিচারে সীমান্ত হত্যা স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয় বরং একটি জরুরী অবস্থা। কিন্ত, এই জরুরী অবস্থা আমাদের কাছে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ব্যতিক্রম হিসেবে ধরা দেয় না। জরুরী অবস্থা চর্চার মধ্যে দিয়ে একটা ধরনের ঐতিহ্য বা প্রথায় উপনিত করা হয় ( Hurd,1999)। ভারত সীমান্ত হত্যাকান্ডের মতো “জরুরী অবস্থা” কে স্বাভাবিক অবস্থায় পরিনত করেছে। এই স্বাভাবিক অবস্থার ভ্রম থেকে বের হয়ে যখন একটি “আসল জরুরী অবস্থায়” উপনীত হতে পারব, তখন ফেলানীদের আর অকাতরে জীবন দিতে হবে না। ভারত রাষ্ট্র কতৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে নিহত একেকটি জীবন হয়ে আছে হোমো স্যাকের বা নগ্ন জীবন। 

দশ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া ১৯৭৪ সালের ভয়াল দুর্ভিক্ষ ঘটে যাওয়ার নেপথ্যে শুধু দেশীয় শাসনতান্ত্রিক ব্যর্থতা নয়, দায় আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখ ফিরিয়ে নেয়ারও। এই দুর্ভিক্ষের দায়ভার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নব্য স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতা্র উপর চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। কেবল খাদ্যযোগান আর খাদ্যবন্টন সমস্যা দিয়ে এই দুর্ভিক্ষ বোঝা সম্ভব নয়।

এখন আসা যাক, বিভাজনের রাজনীতি বলতে এখানে কি বুঝানো হয়েছে। এটা বোঝার আগে আমাদেরকে জাতীয়তাবাদের উত্থান ও পরিণতি সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার। আমাদের এখানকার প্রেক্ষাপটে, জাতীয়তাবাদ প্রথমদিকে অনেক ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে গড়ে ওঠে।